You are currently viewing থ্রি ডি প্রিন্টিংঃ প্রযুক্তি জগতের পরবর্তী স্বর্ণখনি

থ্রি ডি প্রিন্টিংঃ প্রযুক্তি জগতের পরবর্তী স্বর্ণখনি

প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় এগিয়ে চলছি আমরা প্রতিনিয়ত। আমাদের প্রয়োজনের তালিকায় জমা হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি । একটু পেছনে ফিরে তাকানো যাক,আইবিএম যখন তার প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে, তখন কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল যে ত্রিশ বছর পর পুরো বিশ্বে কয়েকশ কোটি কম্পিউটার থাকবে? অথবা বিল গেটস এবং পল আলেন যখন মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন, তখন কেউ কি ভেবেছিল যে বিশ্ব পেতে যাচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তিকে?? অথবা কিছু বছর পূর্বেই যখন অ্যাপল স্মার্টফোন জগতে  পরিবর্তন আনা শুরু করে, তখন কি কেউ ভেবেছিল যে আমরা পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ব এর উপর?

          কেউ যে কল্পনা করতে পারে নি এ কথাটি ঠিক না। যাদেরকে আজ আমরা বিভিন্ন বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের হর্তা-কর্তা বলে চিনি, যাদের হাত ধরে প্রযুক্তির এ আমূল পরিবর্তন , তারা অবশ্যই কল্পনা করতে পেরেছিলেন,এ কথা  স্বীকার করতেই হয় । সাথে সাথে স্বীকার করতে হয় এই হাতে গোনা কিছু প্রযুক্তি স্বর্ণ খনির চেয়েও বেশী মূল্যবান-এ কথাটি ।

          ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ঠ হচ্ছে পুনরাবৃত্তি । এ কথা বেশ জোর গলায় বলা যায় প্রতিনিয়ত কিছু নিত্যনতুন প্রযুক্তি আসবেই যা বদলে দেবে আমাদের জীবনকে । তাই প্রযুক্তিপ্রেমীরা  প্রতিনিয়ত এ সম্পর্কে ভবিষ্যতবানী করার চেষ্টা করে । কারণ যার দূরদর্শীতা যত বেশী, তার সম্ভাবনাও তত বেশী । যে যত ভালোভাবে কোন সম্ভাবনাময় প্রযুক্তির কথা বুঝতে পারবে পরবর্তী বিল গেটস বা স্টিভ জবস হবার সম্ভাবনাও তার বেড়ে যাবে ।

          এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কি হতে পারে পরবর্তী  প্রযুক্তি , যা বদলে দেবে বিশ্বকে? উত্তরটা দেওয়াটা একটু কঠিন , কিন্তু অনায়েসে বেশ কিছু প্রযুক্তির নাম আমরা বলতে পারি যেগুলোর ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। এমন একটি প্রযুক্তি হচ্ছে থ্রি ডি প্রিন্টিং(3D Printing) । অনেক ইতোমধ্যে বলেই ফেলেছেন এটাই পরবর্তী স্বর্ণখনি । কিছুটা প্রলাপ মনে হলেও কথাটি যে ফেলে দেবার মত নয় তা আমরা একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারি ।

          থ্রি ডি প্রিন্টিং কি? থ্রি ডি প্রিন্টিং হচ্ছে বস্তুর ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরির প্রযুক্তি। বস্তুর ত্রিমাত্রিক মডেল কম্পিউটার এ ডিজাইন বা স্ক্যান করে প্রিন্টারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বস্তুটি তৈরির প্রযুক্তির নামই থ্রিডি প্রিন্টিং। থ্রিডি প্রিন্টিং এর জনক হচ্ছেন চাক হাল । তিনি ১৯৮৪ সালে স্টেরিওলিথোগ্রাফি প্রসেস এর উপর ভিত্তি করে প্রথম থ্রিডি প্রিন্টার তৈরি করেন । কিন্তু তবুও এই প্রযুক্তির অগ্রগতি এত ধীর কেন? কারন হচ্ছে বিভিন্ন থ্রি ডি প্রিন্টিং প্রসেস পেটেন্ট করা ছিল । ফলে যে কেউ চাইলেই এটা নিয়ে কাজ করতে পারে নি । কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যখন পেটেন্ট গুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়, এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজের ধুম লেগে যায় । বর্তমান সময়ে এই প্রযুক্তি ওপেন সোর্স হয়ে যাওয়ায় খুব দ্রুতই এর বিকাশ ঘটছে । যে কেউ চাইলেই এটা নিয়ে গবেষনা করতে পারছে এমন কি ইন্টারনেট এ সম্পর্কিত অনেক কন্টেন্ট  ফ্রি ও পাওয়া যাচ্ছে । তার চাইতে বড় বিষয় হচ্ছে এর বিভিন্ন অংশ নিয়ে বিভিন্ন মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে । কেউ হয়তো সফটওয়ার নিয়ে কাজ করছে,কেউ  এর ফিলামেন্ট নিয়ে কাজ করছে । ফলে এর বিকাশ হচ্ছে গুনোত্তর ধারার মত করে।

          প্রচলিত ম্যানুফ্যাকচারিং এর সীমাবদ্ধতা হচ্ছে চাইলেই আমারা প্রোডাক্ট তৈরি করে ফেলতে পারি না, এর জন্য অনেক গুলো ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেমনঃ প্লাস্টিক পার্টস এর ক্ষেত্রে মোল্ড তৈরি করতে হয় । ব্যাপারটা অনেকটা খাজনার চেয়ে বাজনা বেশির মত । একটা মোল্ড তৈরিতে লাখ টাকা লাগে,এছাড়া বানাতেও অনেক সময় লাগে । সুতরাং আমার ডিজাইনের প্রোটটাইপ বা নমুনা আমি চাইলেই দেখতে পারি না ।অথবা কারো শখ হচ্ছে রবোটিক্স নিয়ে কাজ করা। ধরা যাক তার রবোটের জন্য নতুন পার্টস দরকার। চাইলেই সে অ্যাকুরেট পার্টস পাবে না ।তাকে দেখতে হবে মার্কেটে কি কি পার্টস আছে । আর নিজের মত তৈরি করতে চাইলে অনেক টাকা খরচ করতে হবে ।  কিন্তু থ্রি ডি প্রিন্টিং এ ব্যাপারটা খুবই সিম্পল । কম্পিউটারে জাস্ট ডিজাইন করে প্রিন্ট দিয়ে দিলেই কিছু সময়ের মধ্যেই পেয়ে যাবে কাঙ্খিত বস্তু । যা বাঁচাতে পারে মুল্যবান সময় এবং টাকা।এছাড়া আরো নানা ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে , যা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।

থ্রি ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি এখন তার শৈশবে আছে বলা যায় ।এমন এক অবস্থায় আছে  যে কেউ তার নতুন আইডিয়া কাজে লাগিয়ে হয়ে যেতে পারে একজন সফল উদ্যোক্তা ,হতে পারেন ভবিষ্যত বিলগেটস অথবা স্টিভ জবস। কিভাবে আরো ভালো মডেল তৈরি করা যায়,কিভাবে প্রিন্টিংয়ের সময় কমিয়ে আনা যায় , কিভাবে আরো কম দামে প্রিন্টার তৈরি করা যায়  কিংবা নতুন আরো কোন কোন ক্ষেত্রে এ প্রিন্টিং  ব্যবহার করা যায় এ রকমের যে কোন আইডিয়াই নতুন কোম্পানি শুরু করার জন্য যথেষ্ট । ঠিক যেন এক সোনার খনি যার সন্ধানে বদলে যেতে পারে যে কারো ভবিষ্যত । হয়তো হয়ে যেতে পারে বিলিওনিয়র, কিংবা কে জানে হয়তো প্রথম ট্রিলিওনিয়রও। পরবর্তী পোস্ট গুলোতে থ্রি ডি প্রিন্টিং এর আরো অনেক কিছু নিয়ে লেখা হবে । সে পর্যন্ত সাথেই থাকুন।

Leave a Reply