সময়ের সাথে এগিয়ে চলছে থ্রিডি প্রিন্টিং এর ব্যবহার । প্রথম পোস্টে ম্যানুফ্যাকচারিং সময় প্রটোটাইপ বা নমুনার কথা বলা হয়েছিলো । বলা হয়েছিল থ্রিডি প্রিন্টিং প্রোডাক্ট ডিজাইনের সময় ও খরচ দুটোই বাঁচাতে পারে । এই সকল সুবিধার কারনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে থ্রিডি প্রিন্টারের ব্যবহার যা নিচে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলোঃ
১)অ্যারোস্পেসঃ
এয়ারবাস এভিয়েশন জগতে এক সুপরিচিত নাম । তারাও ঝুকেছে থ্রিডি প্রিন্টিং এর দিকে এবং প্রায় দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে মেটাল থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি সম্পন্ন ল্যাবের জন্য। তাদের নতুন ইঞ্জিন এবং এয়ারক্রাফটে প্রায় ১,০০০ এর মত থ্রিডি প্রিন্টেড পার্টস বিদ্যমান ।এয়ারবাসের লক্ষ্য এয়ারক্রাফট এবং ইঞ্জিনে প্রায় অর্ধেক পার্টস থ্রিডি প্রিন্টিং এর মাধ্যমে তৈরি করা ।
ছবিঃ থ্রিডি প্রিন্টেড রকেট ইঞ্জিন
নাসার বিজ্ঞানীরা মার্শাল স্পেস সেন্টারে থ্রিডি প্রিন্টেড রকেট ইঞ্জিন তৈরি করেছে , যা ২০,০০০ পাঊন্ড থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে সক্ষম। থ্রিডি প্রিন্টিং এর সাহায্যে তারা অনেক জটিল যন্ত্রাংশ তৈরি করেছে যা প্রচলিত পদ্ধতিতে করা কষ্টসাধ্য ছিল ।
২)অটোমোবাইলঃ
অটোমোবাইল শিল্পেও থ্রিডি প্রিন্টিং ব্যাপক পরিবর্তন আনছে । অনেক জটিল পার্টস যা পূর্বে ছোট পার্টস এসেম্বলি করে তৈরি করা হতো, থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে তা একবারেই তৈরি সম্ভব হচ্ছে । যার ফলে টুলিং খরচ কমেছে এবং কর্ম দক্ষতা বেড়েছে ।
“Strati” হচ্ছে বিশ্বের প্রথম থ্রিডি প্রিন্টেড গাড়ি । বর্তমানে আরো অনেক গাড়ি রয়েছে যা থ্রিডি প্রিন্টের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।আরো সহজে কিভাবে গাড়ি তৈরি করা যায় তা নিয়ে গবেষনা হচ্ছে ।
ছবিঃ থ্রিডি প্রিন্টেড গাড়ি “Strati”
থ্রিডি প্রিন্টার R&D কাজের খরচ এবং রিস্ক কমিয়ে নিয়ে এসেছে । খুব সহজেই থ্রিডি প্রিন্টিং এর মাধ্যমে ডিজাইনের ভুল সংশোধন সম্ভব হচ্ছে।ফলে অনেক ছোট প্রতিষ্ঠানও অটোমোবাইল নিয়ে গবেষনার সুযোগ পাচ্ছে ।
৩)আর্কিটেকচারঃ
থ্রিডি প্রিন্টার খুব সহজেই আপনার কনসেপ্ট এর স্কেল মডেল বানিয়ে ফেলতে পারে । যে কোন আকৃতির মডেল থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে বানানো সম্ভব।ফলে জটিল সব ডিজাইনের মডেল করে তাদের মধ্যে তুলনার মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ভালো ডিজাইন বাছাই করা সম্ভব হচ্ছে । এর কারনে থ্রিডি প্রিন্টিং টেকনোলজি আর্কিটেক্টদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
চীনে কিছু প্রতিষ্ঠান থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে বাড়ি তৈরি করছে ।এর ফলে কম সময়ে অনেক বাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে । এছাড়া এভাবে তৈরি বাড়ি গুলো দেখতেও বেশ চমৎকার।
ছবিঃ থ্রিডি প্রিন্টের মাধ্যমে তৈরি স্থাপনা
ইন্টেরিওর ডিজাইনার এবং ফার্নিচার তৈরিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে থ্রিডি প্রিন্টিং।
৪)চিকিৎসাক্ষেত্রেঃ
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে এমন একটি বায়োনিক কান তৈরি করা হয়েছে ,যা মানুষের স্বাভাবিক শ্রবনসীমার বাইরের শব্দও শুনতে পারে । থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে কানের,নাকের তরুনাস্থি,কিডনি,কার্ডিয়াক টিস্যু,হার্টের ভাল্ভ, মানুষের স্কাল তৈরি করা হচ্ছে।এগুলো মানুষের দেহে ব্যবহার করা সম্ভব। বায়োপ্রিন্টারের মাধ্যমে মানুষের ত্বক তৈরি করা হয়েছে যা পুড়ে যাওয়া রোগীর দেহে স্থাপন করা সম্ভব । এছাড়া কৃত্রিম হাত পা তো এখন অহরহই তৈরি হচ্ছে যা বিভিন্ন অনলাইন শপে কিনতেও পাওয়া যায়।
ছবিঃ থ্রিডি প্রিন্টেড তরুনাস্থি ও কানের অংশ
৫) প্রোডাক্ট ডিজাইনঃ
প্রোডাক্ট ডিজাইন সম্পূর্ণভাবে ট্রায়াল এন্ড এরর মেথডের উপর নির্ভরশীল। একটি ডিজাইন করার পর বারবার ডিজাইন সংশোধনের প্রয়োজন পরে । কিন্ত প্রচলিত ম্যানুফ্যাকচারিং এ ডিজাইন সংশোধন অনেক কষ্টসাধ্য । সময় এবং টাকার অপচয়ও হয় অনেকবেশী ।তাই বর্তমানে প্রোডাক্ট ডিজাইন সম্পূর্ণভাবে থ্রিডি প্রিন্টিং এর উপর নির্ভরশীল।থ্রিডি প্রিন্টারই পারে কম সময়ে প্রটোটাইপ তৈরি করতে ।
এছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে জটিল বিষয় বোঝাতে,ফ্যাশন,জুয়েলারি সহ আরো অনেক ক্ষেত্রে থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহৃত হচ্ছে ।